বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে টানা পঞ্চম শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। শনিবার ময়মনসিংহে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। খেলার শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে কিংসরা। প্রথমার্ধের ১৯তম মিনিটে ডরিয়েল্টনের গোলে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা।
শনিবার ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে নিজেদের ১৫তম ম্যাচে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারায় বসুন্ধরা। বিজয়ী দলের হয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন গোমেজ জোড়া গোল করেন। মোহামেডানের পক্ষে একমাত্র গোলটি শোধ দেন স্থানীয় মিডফিল্ডার মো. মিনহাজুর আবেদীন রাকিব। এই জয়ে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই টানা পঞ্চম শিরোপা জিতল বসুন্ধরা। পাশাপাশি লিগের প্রথম ম্যাচে মোহামেডানের কাছে হারের প্রতিশোধও তুললো তারা। অন্যদিকে ম্যাচ হারায় টানা ১৪ খেলায় অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভাঙ্গল মোহামেডানের।
স্বাধীনতার পর ঘরোয়া ফুটবলে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবই টানা পাঁচটি লিগ শিরোপা জেতেনি। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়ার বিভাগ ফুটবল লিগে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্যন্ত এই লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। ২০০৭ সালে দেশে পেশাদার ফুটবল চালু হওয়ার পর প্রথম তিনবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। তবে কোনো দলই পারেনি টানা পাঁচটি লিগ শিরোপা জিততে। শনিবার সেই কীর্তি প্রথমবার গড়ল বসুন্ধরা কিংস। তাও আবার তিন ম্যাচ হাতে রেখেই। স্বাধীনতার আগে ঢাকা লিগে ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। ১৯৫৫ সালের লিগেও তারা এগিয়ে ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে সেই লিগ শেষ হয়নি। পরের বছর ওয়ান্ডারার্সই চ্যাম্পিয়ন হয়। যদি বন্যার কারণে সেই লিগ পরিত্যক্ত না হতো তাহলে টানা চার লিগ শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়তো ওয়ান্ডারার্স। বিপিএলের গত আসরেই যে রেকর্ড গড়ে ইতিহাসে নাম লেখায় বসুন্ধরা কিংস।
জিতলেই পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন-এমন সমীকরণ সামনে রেখে শনিবার মোহামেডানের বিপক্ষে মাঠে নামে বসুন্ধরা। ম্যাচের শুরু থেকেই তারা সাদাকালোদের চেপে ধরে। কিংস ফরোয়ার্ডরা একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখেন মোহামেডানের রক্ষণভাগকে। ফলে ১৮ মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পায় কিংসরা। এসময় ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফেরেইরা দামাসেনার বাড়ানো বল থেকে শটে গোল করে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন ডরিয়েলটন (১-০)। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বসুন্ধরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়েই লড়ে বিজয়ীরা। ফলে এই অর্ধের শুরুতেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় তারা। ম্যাচের ৫২ মিনিটে কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সেই ডরিয়েলটন (২-০)। এই গোলের মাধ্যমেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন এবারের লিগে ১৩ গোল করা মোহামেডানের মালির অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতেকে। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ ফেরার চেষ্টার আশায় পাল্টা আক্রমণে গিয়ে কিছু সুযোগ তৈরি করে মোহামেডান। যার একটি থেকে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে গোল পায় তারা। এসময় মিনহাজুর আবেদীন রাকিব গোল করে ব্যবধান কমালেও শেষ পর্যন্ত দলের হার এড়াতে পারেননি (১-২)। লিগের প্রথম পর্বে এই রাকিবের গোলেই মোহামেডানের কাছে হেরেছিল কিংস। রাকিব গোল করার পরপরই শাহরিয়ার ইমন মিস না করলে সমতায় ফিরতে পারতো সাদাকালোরা। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। যদিও মোহামেডানের দুই বিদেশি মালির সুলেমান দিয়াবাতে ও উজবেকিস্তানের মোজাফফরভ গোলের চেষ্টা করেছেন। এ দুইজনের আক্রমণে বসুন্ধরার ডিফেন্ডাররা পরাস্ত হলেও গোলরক্ষক শ্রাবণ ভালো সেভ করেছেন। কিংসের মূল গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো আবাহনী ম্যাচে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েছিলেন। চিকিৎসকের নির্দেশনায় এখনও তিনি বিশ্রামে থাকায় মোহামেডান ম্যাচে খেলেননি তিনি। ম্যাচের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা কিংস। ১৫ ম্যাচ শেষে ১৩ জয় এবং একটি করে ড্র ও হারে ৪০ পয়েন্ট পেয়ে তালিকায় সবার উপরে তারা। সমান ম্যাচে সাতটি করে জয় ও ড্র এবং এক হারে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মোহামেডান। রানার্সআপ ট্রফির জন্য বাকি তিন ম্যাচ জেতা প্রয়োজন সাদাকালোদের। এদিকে লিগ শিরোপা জিতে এই মৌসুমে ট্রেবল জেতার সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুললো বসুন্ধরা কিংস। মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। লিগ শিরোপাও। এখন বাকি শুধু ফেডারেশন কাপ। আগামী মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ঢাকা আবাহনীকে হারাতে পারলে ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও থাকবে কিংসের সামনে।
এদিন মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে লিগের আরেক ম্যাচে শেখ জামালের সঙ্গে গোলশূণ্য ড্র করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। এই ড্রয়ে ১৫ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে চট্টলার দলটি। সমান ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে শেখ জামাল। এছাড়া রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অন্য ম্যাচে ফর্টিসকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছে ব্রাদার্স। ফর্টিসের হয়ে গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ওমর সার এক গোল করেন (১-০)। তবে ম্যাচের শেষ দিকে গোপীবাদের দলটির হয়ে গোল করে পয়েন্ট ছিনিয়ে নেন নয়ন হোসেন (১-১)। এই ড্রয়ে ১৫ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে থাকল ফর্টিস। সমান ম্যাচে মাত্র ৭ পয়েন্ট নিয়ে তলানীতেই ব্রাদার্স।